উত্তর: ভাষার সংঙ্গা: সাধারণ কথায় মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ
করতে যেসব অর্থপূর্ণ ধ্বনি বা শব্দ উচ্চারণ করে তাকে ভাষা বলে। এ বিষয়ে কয়েকটি প্রামান্য
সংঙ্গা নিম্নরুপ-
১. ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর
অভিমত: তিনি বলেন, “মানুষ্য জাতি যেসব ধ্বনি দিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করে, তার নাম
ভাষা”।
২. ড. সুনীতিকুমার
চট্টোপাধ্যায়ের অভিমত: তাঁর মতে, “ মনের ভাব প্রকাশের জন্য বাগ্যন্ত্রের সাহায্যে
উচ্চরিত ধ্বনি দ্বারা নিষ্পন্ন কোনো বিশেষ জনসমাজের ব্যবহৃত স্বতন্ত্রভাবে অবস্থিত
তথা বাক্যে প্রযুক্ত শব্দসমষ্টিকে ভাষা বলে।
৩. ড. শাহজাহান
মুনিরের অভিমত: তাঁর মতে, “মানবজাতি মনের ভাব প্রকাশ করিবার জন্য বাকপ্রত্যঙ্গের
সহায্যে অপরের
বোধগম্য যে ধ্বনি বা ধ্বনিসমুহ উচ্চারণ করিয়া থাকে, তাহার নাম
ভাষা।
সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্য
ব্যবহার ও লেখার বিচারে বাংলা ভাষা দু’ভাবে ব্যবহার হয়। যথা-সাধুরীতি
ও চলিতরীতি। নিচে এদের পাথ্যক্য তুলে ধরা হল-
১. যে ভাষা
ব্যাকরণের নিয়মকানুর পুরোপুরিভাবে মেনে চলে, তাকে সাধু ভাষা বলে। বিভিন্ন অঞ্চলভিত্তিক
ব্যবহৃত বা মৌখিক
ভাষাকে
চলিত ভাষা বলে।
২. সাধু ভাষা ব্যাকরণের অনুসারী। চলিত ভাষা ব্যাকরণের অনুসারী
নয়।
৩. সাধু ভাষায় তৎসম শব্দের প্রয়োগ হয়ে থাকে। চলিত ভাষায় তদ্ভব,
অর্ধতৎসম, ও বিদেশি শব্দের প্রয়োগ হয়ে থাকে।
৪. সাধু ভাষা অপরিবর্তনীয়। চলিত ভাষা পরিবর্তনশীল।
৫. গদ্য,
সাহিত্য, চিঠিপত্র ও দলীল লিখনে সাধু ভাষার ব্যবহার অধিক। চলিত ভাষা বক্তৃতা, সংলাপ,
আলোচনা ও নাট্য সংলাপের
জন্য উপযুক্ত।
৬. সাধু ভাষায় পদবিন্যাস সুনিয়ন্ত্রিত ও সুনির্ধারিত। চলিত ভাষায় পদবিন্যাস সুনিয়ন্ত্রিত ও সুনির্ধারিত
নয়।
৭. সাধু ভাষা শ্রুতিকঠোর ও দুর্বোধ্য। চলিত ভাষা শ্রুতিমধুর
ও সহজবোধ্য।
৮. সাধু ভাষা নীরস ও প্রাণহীন। চলিত ভাষা সরস ও জীবন্ত।
৯. স্বভাবগত সাধু ভাষা গুরুগম্ভীর ও আভিজাত্যের অধিকারী। চলিত
ভাষা সাবলীল ও স্বাচ্ছন্দ্যময়তার অধিকারী।
১০. সাধু
রীতিতে অনুসর্গ হচ্ছে- জন্য, হইতে, থাকিয়া, চাইতে ইত্যাদি। চলিত রীতিতে অনুসর্গ হচ্ছে-
জন্যে, হতে, থেকে, চেয়ে
ইত্যাদি।
১১. সাধু ভাষা কৃত্রিম। চলিত ভাষা কৃত্রিমবর্জিত।
১২. সাধু ভাষায় সন্ধি সমাসের আধিক্য লক্ষণীয়। চলিত ভাষায় সন্ধি
সমাস বর্জন করে সহজ করে লেখার প্রবণতা লক্ষণীয়।
১৩. সাধু ভাষা বহু ভাষা প্রশংসিত। চলিত ভাষা মিত ভাষা আদৃত।
১৪. সাধু
ভাষায় সর্বনাম ও ক্রিয়াপদের ব্যবহার এ ভাষায় পূর্ণরুপে হয়ে থাকে। চলিত ভাষায় এদের আধুনিক
ও সংকুচিত রুপ
ব্যবহার
হয়।
১৫. সাধু ভাষা আঞ্চলিক প্রভাবমুক্ত। চলিত ভাষা আঞ্চলিক প্রভাবধীন।
১৬. উদাহরণ: সাধু ভাষা-তোমাকে কাছে পাইয়া আমি ধন্য হইলাম। চলিত
ভাষা-তোমাকে কাছে পেয়ে আমি ধন্য হলাম।